ঢাকা,সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

পেকুয়া বিএমআই কলেজের কর্মচারী নিয়োগে আবেদনের সময় বাড়ানোর দাবি!

* কম প্রচার বহুল পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ‘পছন্দের লোক’ নিয়োগের পাঁয়তারা

*কলেজ অধ্যক্ষের রহস্যজনক ভূমিকা

*নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম-দুনীতি ও ঘুষ বাণিজ্যেও আশংকা

মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া ::

কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলা সদরে অবস্থিত শহীদ জিয়া বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের তিনটি পদে কর্মচারী নিয়োগের আবেদনের সময় বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন একাধিক চাকুরী প্রার্থী ও স্থানীয় সচেতন মহল। এ নিয়ে গত ৫ নভেম্বর দুপুরে পেকুয়া বিএমআই কলেজের সভাপতি ও পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন কয়েকজন চাকুরী প্রার্থী। তবে বিএমআই কলেজের অধ্যক্ষ আজাদ মো: ফরিদুল আলম চৌধুরী নিয়োগ তার কলেজে কর্মচারী নিয়োগে আবেদনের সময় বাড়ানোর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। চাকুরী প্রার্থী ও স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি উপেক্ষা করে রহস্যজনক কারণে আবেদনের সময় না বাড়ানোর সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় পেকুয়াজুড়ে অধ্যক্ষের ভূমিকা নানা প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে।

পেকুয়া শহীদ জিয়া বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট এর সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর কাছে কয়েকজন চাকুরী প্রার্থীর তাদের অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, পেকুয়া শহীদ জিয়া বিএমআই কলেজের অধ্যক্ষ কর্তৃক গত ২২/০৯/২০২৩ইংরেজী তারিখে কম প্রচার বহুল দুইটি পত্রিকায় অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপরেটর, নৈশ প্রহরী ও আয়া পদে কর্মচারী নিয়োগের জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি প্রচার করেন। অধ্যক্ষ যে জাতীয় পত্রিকায় তার কলেজের কর্মচারী নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রচার করেছেন, সে পত্রিকাটি পেকুয়ায় আসেনা। জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির কপি পেকুয়ার কোন চাকুরী প্রার্থী পায়নি। এছাড়া কর্মচারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিটি পেকুযা শহীদ জিয়া বিএমআই কলেজের ফেসবুক ফেইজে পোস্ট দিয়ে প্রচার করা হয়নি। এ কারণে পেকুয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলের অসংখ্য যোগ্য ও মেধাবী প্রার্থীরা পেকুয়া শহীদ জিয়া বিএমআই কলেজের তিনটি পদে আবেদন করতে পারেনি।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ কারিগরী শিক্ষা বোর্ড অধিভূক্ত ও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক এমপিওভূক্ত পেকুয়া শহীদ জিয়া বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটে তিন পদে কর্মচারী নিয়োগের জন্য কম প্রচার বহুল দুইটি পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করায় অসংখ্য যোগ্য ও মেধাবী চাকুরী প্রার্থীর বিজ্ঞপ্তিটি নজরে না আসায় আবেদন করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিটি প্রতিষ্টানের ফেসবুক ফেইজ ও সভাপতি নিয়ন্ত্রিত উপজেলা প্রশাসনের ফেসবুক ফেইজেও প্রচার করা হয়নি। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তির যুগে অনলাইন মাধ্যমে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রচার না করে কম প্রচার বহুল পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করায় অনেক যোগ্য ও মেধাবী চাকুরী প্রার্থীরা আবেদনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

কয়েকজন চাকুরী প্রার্থী বলেন, উক্ত প্রতিষ্টানের কয়েকজন শিক্ষককের কাছ থেকে মুখে শুনে তিন পদে আবেদন করি। আমরা তিন জন প্রার্থী আবেদন করি পত্রিকায় প্রকাশিত সময়ের দুদিন পর। অধ্যক্ষ আমাদের আবেদনটি বাতিল করা হবে বলে আমাদের জানিয়েছেন। অধ্যক্ষ কর্তৃক যে সব পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে তা কম প্রচার বহুল। পত্রিকাগুলো পেকুয়ায় আসেনা। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্রতিষ্টানের অধ্যক্ষের কোন দুরভসন্ধিমুলক কোন উদ্দেশ্যে না থাকলে কেন কলেজের ফেসবুক ফেইজ ও দেশের প্রচার বহুল জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়নি সেটিই চাকুরী প্রার্থীদের প্রশ্ন।

খোঁ^জ নিয়ে জানা গেছে, বিএমআই কলেজে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপরেটর পদে আবেদন করেছেন উপজেলার মগনামা ইউনিনের বাইন্যা ঘোনা গ্রামের বাসিন্দা বেবী আকতার, নৈশ প্রহরী পদে আবেদন করেছেন একই গ্রামের শাহাদাত হোছাইন ও আয়া পদে আবেদন করেছেন পেকুয়া সদরের পূর্ব বাইম্যাখালী গ্রামের বর্তমান বাসিন্দা নও মুসলিম নারী সামিমা আক্তার পিংকি। এ তিনজন প্রার্থী পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি পায়নি। কলেজের কতিপয় শিক্ষকদের মুখে শুনে আবেদন করেছেন। তবে তারা আবেদন ডাকযোগে পাঠানোর পর জানতে পারেন, আবেদনের সময় দুদিন আগে শেষ হয়ে গেছে। পরে তারা কলেজের অধ্যক্ষের সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারেন দুদিন দেরিতে আসায় তাদের আবেদন বাতিল করা হবে।

এ ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হয় পেকুয়া শহীদ জিয়া বিএমআই কলেজের অধ্যক্ষ আজাদ মো: ফরিদুল আলম চৌধুরীর সাথে। তিনি বলেন, গত মাসের ১১ অক্টোবর আবেদনের শেষ দিন ছিল। দুইটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আগ্রহী চাকুরী প্রার্থীদের ২০দিন সময় দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে যারা আবেদন করেছেন তাদের আবেদন যাচাই-বাচাই করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত নির্ধারিত সময়ের পরে আসলে আবেদন গ্রহণযোগ্য হবেনা। কম প্রচার বহুল পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ায় অনেক মেধাবী ও যোগ্য প্রার্র্থী আবেদন করার সুযোগ পায়নি এমন প্রশ্ন করা হলে অধ্যক্ষ বলেন, অনেক প্রার্থী আবেদন করেছে। এখন আবেদনের সময় বাড়ানোর কোন সুযোগ নাই।

সচেতন মহলের অভিযোগ, কম প্রচার বহুল পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ‘পছন্দের লোক’ নিয়োগের পাঁয়তারা করা হচ্ছে। কলেজ অধ্যক্ষের রহস্যজনক ভূমিকা দেখা যাচ্ছে। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম-দুনীতি ও ঘুষ বাণিজ্যেও আশংকা থাকায় দুদকের নজরদারির দাবি সচতেন মহলে।

পেকুয়া শহীদ জিয়া বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট এর সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার পূর্বিতা চাকমা’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন।

পাঠকের মতামত: